অসংখ্য তারা, মেঘাচ্ছন্ন গ্যাস, ছায়াপথ, কৃষ্ণ গহ্বর এবং আরো অনেক কিছু নিয়ে মহাবিশ্ব।মহাবিশ্বতত্ত্ববিদদের প্রশ্ন “কেনো?” (ছবি:© নাসা) |
হাজার বছর ধরে, মানুষ তারা দেখে আসছে আর অবাক হচ্ছে কিভাবে এগুলো সৃষ্টি হলো। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বছর পর্যন্ত গবেষকরা এই বড় প্রশ্নগুলিকে অধ্যয়নের একটি নিখুঁত ক্ষেত্রে রূপান্তর করার জন্য প্রথম পর্যবেক্ষণমূলক সরঞ্জাম এবং তাত্ত্বিক সরঞ্জামগুলি বিকাশ করতে পেরেছিলেন না।
“ আমি বিশ্বাস করি সৃষ্টিতত্ত্ব মানুষের একটা পুরাতন আগ্রহের বিষয় কিন্তু অন্যতম নতুন বিদ্যা/বিজ্ঞান “, পল স্টেইনহার্ড,প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কসমোলজিস্ট, যিনি সময়ের শুরু আছে কি না এই বিষয়ে পড়াশুনা করেন । সৃষ্টিতত্ত্ব, বলতে গেলে, আলাদাভাবে তারা,কৃষ্ণগহ্বর এবং ছায়াপথ যা দিয়ে মহবিশ্ব পূর্ণ,সেগুলো বিশ্লেষণ না করে একক সত্তা হিসেবে বিশ্লেষণ করা। এই ক্ষেত্রটির বিরাট প্রশ্ন: মহাবিশ্বের সৃষ্টি কোথায়? এর মধ্যে এতো তারা,ছায়াপথ এবং ছায়াপথের সমষ্টি কেনো ? কি হবে এর ভবিষ্যৎ?
“ সৃষ্টিতত্ত্ব মহাবিশ্বের এক বিশাল ক্ষেত্রকে একীভূত করার চেষ্টা করছে ", গ্লেনিস ফারার ,নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কণা পদার্থবিদ। কারণ এই শৃঙ্খলা বহু ঘটনার সাথে জড়িত, শূন্যস্থানের অতি ক্ষুদ্র কণা থেকে সময় এবং চাদরের বিশাল পর্দা পর্যন্ত । মহাজাগতিক বিজ্ঞান জোতির্বিদ্যা,জোতির্বিজ্ঞান এবং ক্রমবর্ধমান কণা পদার্থবিজ্ঞান সহ আরো অনেক বিষয়ে গভীর গুরুত্বারোপ করে ।
“কসমোলজির কিছু অংশ সম্পূর্ণভাবে পদার্থবিজ্ঞানের, কিছু অংশ সম্পূর্ণভাবে জোতির্বিজ্ঞানের এবং কিছু অংশ বিভিন্ন বিষয়ে । এটা খুবই আগ্রহের বিষয়”, স্টেইনহার্ড ।
মহাবিশ্বের ইতিহাসের এক ইতিহাস :
এই আন্তঃশৃঙ্খলার প্রকৃতি, তুলনামূলক ভাবে একটু দেরিতে শুরু করার ক্ষেত্রে সাহায্য করে।
আমাদের আধুনিক মহাবিশ্বের প্রকৃতি মাত্র ১৯২০ এর দশকে শুরু হয়েছে, সাধারণত আলবার্ট আইনস্টাইনের থিওরি অফ জেনারেল রিলেটিভিটি, সময় এবং স্থান ভিত্তিক মধ্যাকর্ষণীয় এক ম্যাথমেটিকাল অবকাঠামোর উন্মোচনের ফলে। “মাধ্যাকর্ষণের ধর্ম বোঝার আগে, তুমি বুঝতে পারবে না কেনো সব জিনিস তার নির্দিষ্ট জায়গায় আছে,” স্টেইনহার্ড । অন্যান্য একটি কণার উপর শক্তির যথেষ্ট প্রভাব থাকতে পারে, কিন্তু গ্রহ, তারা আর ছায়াপথের রঙ্গভূমিতে মাধ্যাকর্ষণ ই হলো প্রধান চালক। আইজ্যাক নিউটনের ব্যাখ্যাকৃত মাধ্যাকর্ষণও এই জগতে কাজ করে, তবে মহাশূন্যে এটা খুবই ধীরে এবং অপরিবর্তনীয় ভাবে কাজ করে যা প্রকৃত তুলনায় নগণ্য । আইনস্টাইনের ব্যাখ্যা আমাদের দেখায় যে, মহাশূন্য নিজে থেকেই এর প্রসার এবং নিয়ম ঠিক করতে পারে, মহাবিশ্বকে পর্যায় থেকে স্থানান্তরিত করে দৃষ্টিগোচরে এবং অধ্যয়নের জন্য একটি গতিশীল অবজেক্ট হিসাবে এটিকে সামনে রেখে।
১৯২০ দশকের মধ্যভাগে , জোতির্বিদ এডউইন হাবল ১০০ ইঞ্চি (২৫৪ সেন্টিমিটার) হুকার টেলিস্কোপের সাহায্যে ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্ট উইলসন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি মহাশূন্যের কিছু নির্দিষ্ট গ্যাসের অবস্থান স্থাপন করতে চেয়েছিলেন যা জোতির্বিদরা দেখতে পারে। তিনি প্রমাণ করলেন যে “নেবুলা” ছোট, নির্দিষ্ট কোনো মেঘ ছিলো না বরং বিশাল বড়, আমাদের মিল্কিওয়ের মতোই দূরবর্তী তারার গুচ্ছ – সময়ের বাক্যে “দ্বীপ বিশ্ব। আজ, আমরা তাদের গ্যালাক্সি বলি এবং জানি এদের সংখ্যা প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন!
মহাজাগতিক দৃষ্টিকোণে সবচেয়ে বড় উত্থান এখনো আসে নি । ১৯২০ এর শেষ দশকের,হাবল দেখান যে আমাদের চারদিকের গ্যালাক্সি গুলো খুব দ্রুত বেগে দূরে সরে যাচ্ছে, যা পরবর্তী দশকের বিতর্কের কারণ। কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড (সিএমবি) এর পরিশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী- মহাবিশ্বের প্রথমে আলোর সৃষ্টি হয়েছে এবং তা মাইক্রওয়েভের মাধ্যমে প্রসারিত হচ্ছে । ১৯৬০ এর দশকে প্রমাণিত হয়েছিল যে বাস্তবতা সাধারণ আপেক্ষিকতা দ্বারা প্রস্তাবিত সম্ভাবনার সাথে মিলেছিল: ক্ষুদ্র এবং অত্যন্ত উত্তপ্ত অবস্থা থেকে সৃষ্টি মহাবিশ্ব ক্রমাগত ঠান্ডা এবং বেড়েই চলেছে । এই ধারণাটি বিগ ব্যাং তথ্য বা মহাবিস্ফোরণ তথ্য নামে পরিচিত,এবং এই তথ্য কসমোলজিস্টদের সজাগ করে দেয় কারণ এটা বলে যে মহাবিশ্বের একটা শুরু ও শেষ থাকতে পারে ।
মহাবিশ্বের শুরু হয় এক বিস্কোরণের মাধ্যমে। কসমোলজিস্টদের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী তারাদের জন্ম অন্য কোনো ১৮০ মিলিয়ন বছর ধরে হয় নি । (ছবি:Shutterlock) |
কিন্তু জোতির্বিদরা চেলিস্কোপের সাহায্যে অন্তত পক্ষে এসব গ্যালাক্সির গতি পর্যবেক্ষণ করতে পারে। মহাজাগতিক এর সবচেয়ে ভূকম্পনীয় শিফটের একটি, ফারার তথ্য, এটি বলে মহাবিশ্বের অধিকাংশই অন্য কিছু দিয়ে তৈরি যা সম্পূর্ণ অদৃশ্য। আমরা যে দৃশ্যমান বস্তু গুলো দেখতে পাই সেগুলো এতোই অল্প যে,মহাবিশ্বের তুলনায় তা মাত্র ৫%। মহাবিশ্বের বাকি ৯৫% অংশ যা “ডার্ক ম্যাটার” নামে পরিচিত, ১৯৭০ এর দশকে চিন্তার প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তারপর, জোতির্বিজ্ঞানী ভেরা রুবিন বুঝতে পারেন যে গ্যালাক্সি গুলো চরকির মতো চারিদিকে ঘুরছে যাতে তারা আলাদাভাবে ঘুরতে পারে। উল্লিখিত করার বিষয় হচ্ছে, ফারার তথ্য অনুযায়ী, যে বস্তু এই গ্যালাক্সি গুলোকে একত্রে রাখে এর অধিকাংশই পদার্থবিদদের অজানা-মাধ্যাকর্ষণ আকর্ষণ ব্যতীত-সম্পূর্ণ ভাবে সাধারণ বস্তু এবং আলো থেকে আলাদা। পরবর্তীতে ম্যাপিং এর সাহায্যে জানা গেছে, এই গ্যালাক্সি গুলো “ডার্ক ম্যাটারে” ছড়িয়ে আছে যার কেন্দ্র প্রকান্ড নিউক্লিয়াস। অন্ধকার অবকাঠামোর মধ্যে আবদ্ধ এই দৃশ্যমান রশ্মিগুলো, যা মহাবিশ্বে প্রসারিত,এর সংখ্যা এক থেকে পাঁচের মধ্যে।
ইতিমধ্যে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ অপ্রত্যাশিত এক শক্তির প্রকারভেদ উন্মোচন করে-১৯৯০ এর দশকে মহাজাগতিকরা যখন অন্ধকার পদার্র (২৫%) এবং দৃশ্যমান পদার্থ (৫%) হিসাবের পর বাকি ৭০% নিয়ে হিসাব করছিলেন, তখন তারা বুঝতে পারেন যে এর প্রসারণ একটি চলমান ট্রেনের মতো। “ডার্ক এনার্জি” সম্ভবত এমন এক ধরণের শক্তি যা এই মহাবিশ্ব থেকেই উদ্ভুত, যা এই মহাবিশ্বকে মাধ্যাকর্ষণের অপেক্ষা অধিক শক্তি দিয়ে বাহিরের দিকে প
বাহিরের দিকে প্রসারিত করছে। ট্রিলিয়ন বছরের মধ্যেও কোনো জ্যোতির্বিদ যদি নিজেকে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে খুঁজে পান, তাহলে দেখবে এটি ডার্ক ম্যাটার দিয়ে আবদ্ধ। “আমরা মহাবিশ্বের ইতিহাসের এমন এক পরিবর্তনের মুখে আছি যেখানে আমরা এক বস্তু দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়ে নতুন অন্য এক শক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হবো। ডার্ক ম্যাটার আমাদেল অতিত নির্ধারণ করেছে যেখানে ডার্ক এনার্জি আদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
আধুনিক এবং ভবিষ্যৎ সৃষ্টিতত্ত্ব :
বর্তমান কসমোলজি এই ল্যান্ডমার্ক আবিষ্কারগুলিকে এর মুকুট অর্জনের জন্য প্যাকেজ দেয়, লাম্বদা-সিডিএম মডেল (Lambda-CDM model)। কখনো কখনো মহাজাগতিক স্ট্যান্ডার্ড কসমোলজি নামে পরিচিত এই সমীকরণ গুচ্ছ গুলোকে প্রথম থেকে দ্বিতীয়টি বর্ণনা করে। এই মডেলটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ডার্ক এনার্জি (ল্যাম্বডা, সাধারণ আপেক্ষিকতা এর উপস্থাপনা জন্য) এবং কোল্ড ডার্ক ম্যাটার (সিডিএম) এবং এর সাথে সম্পর্ক যুক্ত কিছু দৃশ্যমান বস্তুকে অন্তর্ভুক্ত করে, এই মহাবিশ্বের আকৃতি এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য, যা পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ দ্বারা বর্ণিত। Steinhardt বলেন, যে শিশুর-মহাবিশ্বের চলচ্চিত্রটিকে 13.8 বিলিয়ন বছর এগিয়ে নিয়ে যায় এবং মহাজাগতিকরা একটি স্ন্যাপশট পান যা "পরিসংখ্যানগতভাবে আমরা একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে পরিমাপ করতে পারি"। এই মডেলটি হল হিট করার লক্ষ্যে প্রতিনিধিত্ব করে যেন মহাবিশ্ববিদরা অতিত এবং ভবিষ্যতে গভীরভাবে প্রবেশ করতে পারেন।
ল্যামডা-সিডিএম যতটা সফল হয়েছে, এর চেয়েও বেশি পরিমাণ জট আছে যার উপর কাজ করতে হবে। মহাবিশ্বের বর্তমান প্রসারণ নিয়ে স্টাডি করার সময় কসমোলজিস্টরা এখনো দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে, আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে তাঁরা সবচেয়ে কাছের গ্যালাক্সি বা সিবিএম থেকে এটি সরাসরি পরিমাণ করতে চান। এই মডেলটি ডার্ক পদার্থ বা শক্তির মেকআপ সম্পর্কে কিছুই বলে না।
তারপরেই অস্তিত্বের প্রথম দ্বিতীয়টি সেখানে সমস্যাযুক্ত, যখন মহাবিশ্ব সম্ভবত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ছাঁটাই থেকে আপেক্ষিকভাবে ভাল আচরণের বুদ্বুদে চলে গিয়েছিল।
“inflation” (বিস্ফোরণ) হলো এমন একটি জনপ্রিয় পিরিয়ড যা এই বিষয়টি কে হ্যান্ডেল করার চেষ্টা করে। এটি ব্যাখ্যা করে কিভাবে অতি ক্ষুদ্র আদিম বস্তু এতো দ্রুত বিস্ফোরিত হয়ে আজকের এই বিশালাকার মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে, যেভাবে ল্যামডা-সিডিএম তাদের ব্যাখ্যা দিয়েছিলো।
কেউ এখনো এই বিস্ফোরণের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি, বা এটি কেনোই বা থেমেছিলো যেখানে থামার কথা। স্টেইনহার্ট বলেছিলেন যে মহাকাশের অনেক অঞ্চলে এই বিস্ফোরণ অব্যাহত রাখা উচিত ছিল, এই কারণে যে আমাদের মহাবিশ্ব এই সম্পূর্ণ “multiverse” এর একটি অংশ মাত্র যা প্রতিটি সম্ভাব্য এলাকায় বিদ্যমান- একটি অপরীক্ষিত আইডিয়া যা অনেক পরীক্ষকদের মাঝে দ্বিধা সৃষ্টি করে।
এই দ্বিধাগুলোর সমাধান খুঁজতে জ্যোতির্বিদরা মহাশূন্যে স্থাপিত হাবল স্পেস টেলিস্কোপ এবং আসন্ন জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্যে এক নিখুঁত পরীক্ষা চালাচ্ছে। পাশাপাশি মহাকর্ষ তরঙ্গ জ্যোতির্বিদ্যার উদীয়মান ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, যেমন: the National Science Foundation's Laser Interferometer Gravitational-Wave Observatory. কসমোলজিস্টরা অন্ধকার পদার্থের কণা সনাক্ত করার জন্য একটি আন্তঃবিষয়ক দৌড়ের মধ্যে কণা পদার্থবিদ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সাথেও যোগ দেন।
পদার্থবিদ্যার অন্যান্য শাখাগুলি পরিপক্ক না হওয়া পর্যন্ত মহাজাগতিক বিজ্ঞান যেমন শুরু করতে পারেনি তেমনি অন্যান্য অঞ্চল আরও সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মহাবিশ্বের ইতিহাস প্রকাশ করা শেষ করতে পারবেন না।“ এর ইতিহাস জানতে চাইলে, তোমাকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পদার্থবিজ্ঞানের সকল সূত্র গুলোকে যেকোনো পরিমাণে এবং যেকোনো অবস্থায় পর্যবেক্ষণ করতে হবে,” স্টেইনহার্ড। “এবং এর যেকোনোর একটি পরিবর্তন কসমোলজির ইতিহাস পাল্টে ফেলতে পারে ”।
ফারার বলেছিলেন যে এটি ঘটবে কিনা তা তিনি জানেন না তবে আশ্চর্য যে মহাবিশ্বের জটিলতা তাদের যতটুকু ছিলো সাধারণ মানুষকে ততোটুকু বুঝাতে পেরেছিলো । “এটা বিস্ময়কর যে মানব মস্তিষ্ক এমন ভাবে সুগঠিত যে এই প্রশ্ন গুলো উত্তর দেওয়া সম্ভব। অন্তত পক্ষে কিছুটা,” তিনি বললেন।
মূল আর্টিকেলটির লিংকঃ
https://www.livescience.com/65384-cosmology.html?fbclid=IwAR1Icu7X_PMwqR1hTz9r0aH_10GKUiBWVp79l6zdnfHziulkkafPOgqEb3w
0 Comments