করোনা বিষয়ক মিথ বাস্টারস - তন্ময় মোদক

মিথ বাস্টারস-WHO
( অনুবাদ করেছেন তন্ময় মোদক)

সারা পৃথিবী ব্যাপি ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মানুষকে কেবল করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে তা নয়। করোনা ভাইরাস নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক কুসংস্কার ছড়িয়ে পড়েছে। WHO সেগুলোর বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছে। সেটার বাংলা অনুবাদ করেছেন তন্ময় মোদক।
 
১। কোভিড-১৯ 5G মোবাইল নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে ছড়ায় নাঃ

ভাইরাসগুলো সাধারণত রেডিও ওয়েব বা মোবাইল নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে ভ্রমণ করতে পারে না। মূলত যেসকল দেশে কোভিড-১৯ বিস্তার লাভ করেছে সেগুলোর অধিকাংশের 5G মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই।
ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত ব্যক্তি যখন হাঁচি-কাশি দেয় বা কথা বলে তখন শ্বাসকষ্টের ফোঁটাগুলোর মাধ্যমে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ে। দূষিত পৃষ্ঠ স্পর্শ করার পর এবং পরে সে হাত দিয়ে চোখ,মুখ ও নাক স্পর্শ করলে মানুষ এটা দ্বারা সংক্রামিত হতে পারে।

২। সূর্য বা ২৫°c তাপমাত্রার উপর নিজেকে রাখলে সেটা করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯)  প্রতিরোধ করতে পারে নাঃ

সূর্যের তাপমাত্র যতই গরম বা ঠান্ডা হউক না কেনো একজন কোভিড-১৯ দ্বারা সংক্রামিত হবে। এমনকি যেসকল দেশের তাপমাত্রা
অধিক সেগুলোতেও কোভিড-১৯ দ্বারা সংক্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে। নির্দিষ্ট সময় পরপর ভালোভাবে হাত ধোওয়ার মাধ্যমে এবং চোখ, মুখ ও নাক স্পর্শ না করার মাধ্যমে নিজেকে এটা দ্বারা সংক্রমনের থেকে রক্ষা করা যায়।

৩। আপনি করোনা ভাইরাস রোগ (কোভিড-১৯) নিরাময় লাভ করতে পারেন। নতুন করোনা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়া এই নয় যে এটা সারাজীবন আপনার সাথে থেকে যাবেঃ

কোভিড-১৯ দ্বারা সংক্রমিত হওয়া অধিকাংশ ব্যক্তি এটা থেকে সুস্থ হয়েছে এবং নিজের দেহ থেকে ভাইরাসও দূর করতে সক্ষম হয়েছে। আপনি যদি এটা দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকেন তবে এর লক্ষণগুলো জেনে নিন সঠিক চিকিৎসার জন্য। যদি আপনার কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা হয় তবে আপনাকে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা প্রয়োজন। অধিকাংশ রোগী এভাবে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

৪। ১০ সেকেন্ড বা তার বেশি সময় যাবৎ কোন প্রকার কাশি ছাড়া আপনার শ্বাস ধরে রাখতে পারার মানে এই নয় যে আপনি করোনা ভাইরাস রোগ (কোভড-১৯) বা শ্বাসনালীর অন্য কোননরোগ থেকে মুক্তঃ

শুকনো কাশি,অসারতাবোধ এবং জ্বর কোভিড-১৯ এর সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। অনেকের মাঝে নিউমোনিয়ার মতো মারাত্মক রোগেও আক্রান্ত হতে পারে। শুধুমাত্র ল্যাবে পরীক্ষার মাধ্যমেই আপনি করোনা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়া নিশ্চিত হতে পারেন। শ্বাসের কোন ব্যায়াম দ্বারা এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায় না।

৫। এলকোহল খাওয়া বা পান করা আপনাকে কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা করতে পারবে না, এমনকি এটা আরে ভয়ানকও হতে পারেঃ 


অতিরিক্ত এলকোহল পান আপনার স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।

৬।কোভিড-১৯ ভাইরাসটি গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়াযুক্ত অঞ্চলে সংক্রমণ হতে পারে।

এপর্যন্ত প্রাপ্ত সকল প্রমাণের ভিত্তিতে বলা যায় কোভিড-১৯ ভাইরাসটি গরম ও আর্দ্র আবহাওয়াযুক্ত সকল অঞ্চলে সংক্রমণ হতে পারে।    জলবায়ু নির্বিশেষে, আপনি যদি বসবাস করেন বা কোভিড-১৯  এর প্রতিবেদন করা কোনও অঞ্চলে ভ্রমণ করে থাকেন তবে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। আপনাকে রক্ষা করার ভালো উপায় হচ্ছে বারবার দুহাত ভালো করে পরিষ্কার করা (সাবান বা হ্যান্ডওয়াস দিয়ে)।  এটি করার মাধ্যমে আপনি আপনার হাতের ভাইরাসগুলি নির্মূল করতে পারেন এবং আপনার চোখ, মুখ এবং নাক স্পর্শ করার মাধ্যমে সংক্রমণ থেকে বাঁচতে পারেন।

৭। ঠান্ডা আবহাওয়া বা তুষারপাত নতুন করোনাভাইরাসকে ধ্বংস করতে পারে নাঃ

এটা বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই যে ঠান্ডা আবহাওয়া নতুন করোনা ভাইরাস বা অন্য কোন রোগকে মারতে পারে। বাহিরের তাপমাত্রা বা আবহাওয়া যেরকমই থাকুক না কেন মানুষের দেহের তাপমাত্রা সর্বদা ৩৬.৫°C- ৩৭°C থাকে। আর আপনাকে নতুন করোনাভাইরাস থেকে রক্ষার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো বারবার অ্যালকোহল বেইজড হ্যান্ড রাব বা সাবান পানি দিয়ে হাত ধোওয়া।

৮। গরম পানি দিয়ে গোসল নতুন করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে নাঃ 

গরম পানি দিয়ে গোসল আপনাকে নতুন করোনা ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হওয়া প্রতিরোধ করতে পারে না। আপনি যেকোন তাপমাত্রার পানিতে গোসল করুন না কেন আপনার দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা সর্বদা ৩৬.৫°C- ৩৭°C থাকে। প্রকৃতপক্ষে গরম পানি বা অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে গোসল আপনার জন্য ক্ষতিকরও হতে পারে কারন এটা আপনার শরীরকে পুড়িয়ে ফেলতে পারে। আপনাকে রক্ষা করার ভালো উপায় হচ্ছে বারবার দুহাত ভালো করে পরিষ্কার করা (সাবান বা হ্যান্ডওয়াস দিয়ে)।  এটি করার মাধ্যমে আপনি আপনার হাতের ভাইরাসগুলি নির্মূল করতে পারেন এবং আপনার চোখ, মুখ এবং নাক স্পর্শ করার মাধ্যমে সংক্রমণ থেকে বাঁচতে পারেন।

৯। নতুন করোনা ভাইরাস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায় নাঃ

  আজ অবধি কোনও তথ্য বা প্রমাণ পাওয়া যায় নি যে নতুন করোনাভাইরাসটি মশার মাধ্যমে সংক্রমণ হতে পারে। নতুন করোনাভাইরাস হল একটি শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস যা প্রাথমিকভাবে সংক্রামিত ব্যক্তির কাশি বা হাঁচি বা নাক থেকে লালা বা স্রাবের ফোঁটাগুলির মাধ্যমে উৎপন্ন ফোঁটাগুলোর মাধ্যমে ছড়ায়। আর আপনাকে নতুন করোনাভাইরাস থেকে রক্ষার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো বারবার অ্যালকোহল বেইজড হ্যান্ড রাব বা সাবান পানি দিয়ে হাত ধোওয়া।

১০। হ্যান্ড-ড্রায়ার কি নতুন করোনা ভাইরাস মারতে কার্যকরী? 

না। হ্যান্ড ড্রায়ার নতুন করোনাভাইরাস মারতে কার্যকরী নয়। আর আপনাকে নতুন করোনাভাইরাস থেকে রক্ষার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো বারবার অ্যালকোহল বেইজড হ্যান্ড রাব বা সাবান পানি দিয়ে হাত ধোওয়া। একবার আপনার হাত পরিষ্কার হয়ে গেলে,আপনি সেটাকে পেপার টিস্যু বা এয়ার ড্রায়ার দিকে শুকিয়ে নিতে পারবেন।

১১। আল্ট্রাভায়োলেট ডিসইনফেকশন ল্যাম্প কি নতুন করোনা ভাইরাসকে মারতে পারে? 

হাতের বা ত্বকের অন্যান্য অংশগুলিকে জীবাণুমুক্ত করার জন্য ইউভি ল্যাম্প ব্যবহার করা উচিত নয় কারণ ইউভি রেডিয়েশনের ফলে ত্বকের জ্বালা হতে পারে।

১২। নতুন করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত মানুষদের সনাক্ত করতে থার্মাল স্ক্যানার কতটুকু কার্যকরী?

নতুন করোনাভাইরাস দ্বারা যদি কারো জ্বর হয় তবে সেটা থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে সনাক্ত করা যায়। যারা এখনও জ্বরে আক্রান্ত হয় নি তবে সংক্রমিত তাদের সনাক্ত করতে পারে না।  কারণ আক্রান্ত ব্যক্তিরা অসুস্থ হয়ে পড়া এবং জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার আগে ২ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সময় লাগে।

১৩। পুরো শরীরে অ্যালকোহল ও ক্লোরিন দ্বারা স্প্রে করলে কি নতুন করোনাভাইরাস মারা যায়?

না।যেসকল ভাইরাসগুলো ইতিমধ্যে শরীরে প্রবেশ করেছে সেগুলো অ্যালকোহল বা ক্লোরিন পুরো শরীরে স্প্রে এর মাধ্যমে মারবে না। এ ধরনের পদার্থ শরীরে স্প্রে করা কাপড় ও মিউকাস মেমব্রেন এর জন্য খুবই ক্ষতিকর।অ্যালকোহল ও ক্লোরিন উভয়ই কোন পৃষ্ঠকে জীবাণুমুক্ত করতে সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা দরকার।

১৪। নতুন করোনাভাইরাস থেকে আপনাকে প্রতিরোধ করতে কি নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন কার্যকরী?

না। নিউমোনিয়া প্রতিরোধী ভ্যাকসিন, যেমন নিউমোক্কাল ভ্যাকসিন এবং হিমোফিলিয়া ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি ভ্যাকসিন,নতুন করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে কোন ভূমিকা পালন করে না। এটা এতটাই নতুন ও ভিন্ন যে এটা প্রতিরোধ করতে এটার নিজস্ব ভ্যাকসিন প্রয়োজন। ২০১৯-নতুন করোনাভাইরাস এর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন তৈরি করতে বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং WHO এটা সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।যদিও ২০১৯-নতুন করোনাভাইরাস এর বিরুদ্ধে এসকল ভ্যাকসিনগুলো কার্যকর নয় তবুও শ্বসনতন্ত্রের অসুস্থতা জন্য ভ্যাকসিনেশন সুপারিশ করা হয়ে থাকে।

১৫। প্রতিনিয়ত স্যালাইন পানি দিয়ে আপনার নাক পরিষ্কার কি নতুন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সহায্য করবে?

না। প্রতিনিয়ত স্যালাইন পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করার মাধ্যমে নতুন করোনাভাইরাস প্রতিরোধের কোন প্রকার প্রমাণ পাওয়া যায় নি।স্যালাইন পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করার মাধ্যমে সাধারণ ঠান্ডা থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করার প্রমাণ কিছু মাত্রায় পাওয়া গেছে। যাহোক প্রতিনিয়ত এভাবে নাক পরিষ্কার করে শ্বসনতন্ত্রের কোন ইনফেকশন থেকে আরোগ্য পাওয়ার কোন প্রমাণ নেই।

১৬। নতুন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে রসুন খাওয়া কি কার্যকর?

রসুন একটি স্বাস্থকর খাবার যেটার এন্টিমাইক্রোবাইল ক্ষমতা রয়েছে।কিন্তু নতুন করোনাভাইরাস এর এই মহামারী থেকে রসুন খাওয়ার মাধ্যমে প্রতিরোধের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি।

১৭। নতুন করোনভাইরাসগুলি কি বয়স্ক ব্যক্তিদেরকে প্রভাবিত করে বা অল্প বয়সীরাও কি এর প্রতি সংবেদনশীল? 

নতুন করোনাভাইরাস দ্বারা যেকোন বয়সের ব্যক্তিরা সংক্রমিত হতে পারে। সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিরা এবং যেসল ব্যক্তিদের পূর্বের কোন রকম সমস্যা যেমনঃ অ্যাজমা,ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে তারা এই ভাইরাস দ্বারা সবথেকে বেশি আক্রান্ত হতে পারে।আর একারণে WHO সকল বয়সের ব্যক্তিদের নিজেদের এই ভাইরাস থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে।

১৮। নতুন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ও চিকিৎসায় কি এন্টিবায়োটিক কোন কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে?

না, এন্টিবায়োটিক শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকরী ভাইরাসের বিরুদ্ধে নয়। যেহেতু নতুন করোনাভাইরাস একধরনের ভাইরাস তাই এটি প্রতিরোধে ও চিকিৎসায় এন্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয় না। কিন্তু করোনভাইরাস দ্বারা আক্রন্ত হয়ে আপনি যদি হাসপাতালে ভর্তি থাকেন তবে আপনাকে এন্টিবায়োটিক ও গ্রহণ করতে হবে কারণ এক্ষেত্রে কো-ইনফেকশন এর সম্ভাবনা থাকে।

১৯। নতুন করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য কি কোন নির্দিষ্ট মেডিসিন রয়েছে?

আজ অবধি নতুন করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও চিকিৎসা করার জন্য নির্দিষ্ট কোন মেডিসিন সুপারিশ করা হয় নি। তবে ভাইরাসে আক্রান্তদের লক্ষণগুলি থেকে মুক্তি এবং চিকিৎসা করার জন্য যথাযথ যত্ন নেওয়া উচিত এবং গুরুতর অসুস্থতায় আক্রান্তদের প্রয়োজনীয়  যত্ন নেওয়া উচিত। কিছু নির্দিষ্ট চিকিৎসা পরীক্ষাধীন রয়েছে, এবং ক্লিনিকাল ট্রায়ালের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হচ্ছে। WHO একটি পরিসীমা বা অংশীদারদের সাথে গবেষণা এবং উন্নয়নের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করছে।

মূল লেখার লিংকঃ https://www.who.int/emergencies/diseases/novel-coronavirus-2019/advice-for-public/myth-busters

Post a Comment

0 Comments