যথেচ্ছ বন্য প্রাণী আহরণ উন্মুক্ত করছে বহু ভাইরাস

একটি বিশ্বমহামারী উত্তমরূপে প্রতিফলন করেছে  মানুষ হিসেবে আমরা কোথায় ভুল করেছি। একটি নতুন গবেষণা মতে বিশ্বব্যাপী প্রাণীদের উপর মানুষের প্রভাবই জুনোটিক ডিজিস (যে রোগ প্রাণী থেকে ছড়ায়) ছড়ানোর জন্য দায়ী।

গবেষণা বলছে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর শিকার, বাণিজ্য, প্রাকৃতিক বাসস্থান নষ্ট করা, নগরায়ন ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের ক্রমাগত হস্তক্ষেপ স্তন্যপায়ীদের স্থানান্তরিত করেছে এবং সংক্রামক রোগের বিস্তার করেছে যা মানুষের মধ্যেও বিস্তার লাভ করতে পারে।


মানুষ যেহেতু প্রতিনিয়ত বন্য প্রাণির সংস্পর্শে যাচ্ছে সেহেতু এটাই স্বাভাবিক যে এসব ভাইরাস প্রাণী থেকে মানুষে আসবে। 

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার এপিডেমিওলোজিস্ট ক্রিস্টিন জনসন নিউজউইক কে বলেছেন, "যেহেতু প্রাকৃতিক আবাসস্থল কমছে, বন্য জীব মানুষের আরও নিকটে আসছে। মানুষের কর্মকাণ্ডের জন্য বন্যপ্রাণীদের নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে।  "এটাই রোগের উদ্ভবকে তরান্বিত করছে এবং আমাদেরকে বিশ্বমহামারীর ঝুঁকিতে ফেলছে।"

এই বাস্তবতা এখন বিশ্ব খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। গত শতাব্দী থেকে বন্যপ্রাণী থেকে সংক্রমণ একটি সংকটে পরিণত হয়েছে এবং নতুন ফলাফল বলছে বিপন্নপ্রায় স্তন্যপায়ী প্রাণীরা এই সমস্যার একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে।

বন্য এবং গৃহপালিত পশু থেকে মানুষের ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার উপর ২০১৩ পর্যন্ত প্রকাশিত তথ্য তুলনা করে প্রকাশক দেখিয়েছেন কোন ধরনের প্রাণীর সাথে মিথস্ক্রিয়া মানুষকে ঝুঁকিতে ফেলছে।


সেখানে তিন দলের প্রাণী ছিলো যারা ভাইরাস এর স্পিল ওভার এর ঝুঁকি বহন করছিল।স্বভাবতই গৃহপালিত পশু যেমন গবাদিপশু সর্বোচ্চ সংখ্যক ভাইরাস মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে যেটা তাদের বন্য প্রতিরূপ থেকে আট গুণ বেশি।

বন্যদের মধ্যে যে প্রাণিগুলো মানব প্রভাবিত পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিয়েছে এবং সংখ্যাধিক্য লাভ করেছে তারাই ভাইরাস বেশি ছড়াচ্ছে।যেমনঃ বাদুড়, ইদুর, প্রাইমেট।

উপরন্তু ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত শোষণ এবং আবাস সংকটের ফলে হুমকির মুখে পতিত বন্যপ্রাণীরা অন্যান্য কারণে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের থেকে দ্বিগুণ জুনোটিক ভাইরাসের বাহক। সংক্ষেপে, মানুষ যখন বন্যপ্রাণীর  খুব নিকটে থাকে তখন ভাইরাস স্পিল ওভারের সম্ভবনা বেশি থাকে। এবং সব সম্ভাবনার পরেও আমরা এই ভয়ানক বিপদ হবার সম্ভাবনাকে যথাযথ মূল্যায়ন করছি না।

গবেষক আরো বলছ , " এই গবেষণার সময় যে রিপোর্ট গুলো আমরা পেয়েছি সেগুলা থেকে যখনই আমরা জুনোটিক ভাইরাসের কাঠামোর উপর আলোকপাত  করেছি, আমরা উদ্বিগ্ন হয়েছি কারণ কিছুক্ষেত্রে প্যাথোজেন স্পিল ওভার দৃশ্যমান হয় না , শুধু কিছু স্পিল ওভার যা মানুষে প্রাদুর্ভাব ঘটায় সেটা দৃশ্যমান হয় ।"

ICUN  এর রেড লিস্ট অনুযায়ী ২০১৯ সালের হিসেবে পুরো পৃথিবীর বন্যজীবের এক চতুর্থাংশ হুমকির মুখে। যখন মানুষের কর্মকাণ্ড এবং নগরায়ন পৃথিবীর জীব বৈচিত্রের ক্ষতি করেছে, তখন কিছু প্রজাতি খুব বেশি বিস্তার লাভ করেছে এবং মানুষের কার্যকলাপের সাথে অভ্যস্ত হয়ে গেছে যেমন, ইঁদুর।

জনসন বলেছেন,"আমাদেরা বন্যপ্রাণীর সাথে মিথস্ক্রিয়া এবং যেসকল কর্মকাণ্ড প্রাণিকে মানুষের সংস্পর্শে আনে সেসব বেপারে সতর্ক
"আমরা অবশ্যই এই রকম বিশ্বমহামারী চাই না। যেহেতু প্রাণিদের আমাদের দেওয়ার মত ভাইরাসের অভাব নেই সেহেতু আমাদের নিরাপদে এই প্রাণির সাথে সহাবস্থানের পথ খুঁজতে হবে।" (সায়েন্স এলার্ট অবলম্বনে)

লেখকঃ উত্তম কুমার বালা

Post a Comment

0 Comments