SARS-CoV-2 এর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি কিছু মাত্রায় প্রতিরক্ষা প্রদান করতে সক্ষম কিন্তু বৈজ্ঞানিকদের এটার জন্য আরো অনেক তথ্য প্রয়োজন।
সাংহাইয়ে গবেষক এন্টিবডি পরীক্ষা করছেন। এই পরীক্ষা গুলো থেকেই জানা সম্ভব কারা করোনাভাইরাস প্রতি ইমিউনিটি প্রদর্শন করে। Credit: Getty Images |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রসাশন সম্প্রতি SARS-CoV-2, যা নতুন করোনাভাইরাস এর রোগ কোভিড-১৯ এর জন্য দায়ী, এর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডিগুলোর জন্য রক্ত পরীক্ষার একটি "জরুরী ব্যবহার অনুমোদন" দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের জন্য অনুমোদন পাওয়া এটি প্রথম জাতীয় পরীক্ষা। এবং এটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ও নেতারা চলমান মহামারীর সম্ভাব্য শেষ সমাধান হিসেবে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে ( ইমিউনিটি) গ্রহণ করেছে। কলোরাডোতে, করোনাভাইরাস অ্যান্টিবডি পরীক্ষা তৈরির একটি সংস্থা রাজ্যের সান মিগুয়েল কাউন্টিতে কিটস দান করেছে যাতে সেখানকার বাসিন্দারা যদি চান তবে এই ভাইরাসের অ্যান্টিডির পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন। এবং ইতালির রাজনীতিবিদরা সাধারণ মানুষ যেন কাজে ফিরে যাওয়ার গ্যারান্টি পেতে পারেন সেটা নির্ধারণ করার জন্য অ্যান্টিবডি স্ট্যাটাস ব্যবহার করতে চায়।
এই অ্যান্টিবডিগুলির পরীক্ষা করার জন্য বেশ কয়েকটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী সমীক্ষা এখন বিশ্বজুড়ে চালু করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দ্বিতীয় সলিডারিটি স্টাডি অর্ধেক ডজনেরও বেশি দেশ থেকে অ্যান্টিবডি সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, একটি সহযোগিতামূলক মাল্টিইয়ার প্রকল্পের লক্ষ্য দেশব্যাপী অ্যান্টিবডি বিস্তারের চিত্র সরবরাহ করা। এর প্রথম পর্যায়ে ইতিমধ্যে নিউ ইয়র্ক সিটি, সিয়াটল এবং মিনিয়াপলিস সহ ছয়টি বড় বড় শহরে রক্তদাতাদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র দ্বারা সমর্থিত এই প্রচেষ্টাটি দাতাদের তিনটি জাতীয় সমীক্ষায় বিবর্তিত হবে, এবং এটি মূলত ২০২০-২০২১ সালের শরৎকাল পর্যন্ত পরিচালিত হবে।
ডায়াগনস্টিক টেস্টগুলির মত, যা ভাইরাসের উপস্থিতি এবং কখনও কখনও লোড বা পরিমাণের পরিমাণ নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়, অ্যান্টিবডি পরীক্ষাগুলিও আগে কেউ সংক্রামিত হয়েছিল কি না তা নির্ধারণ করতে সহায়তা করে — এমনকি যদি সেই ব্যক্তি কখনও লক্ষণ প্রকাশিত নাও করে। এই ধরনের অ্যাসের (পরীক্ষা) বিস্তৃত ব্যবহার বিজ্ঞানীদের ভাইরাসটি কতটা মারাত্মক এবং কীভাবে এটি সমগ্র জনসংখ্যায় ছড়িয়ে পড়েছে তার আরও গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিতে পারে।
এই অ্যান্টিবডি পরীক্ষাগুলি বাস্তব জীবনের জন্য কী বোঝায় তা খুব একটা স্পষ্ট নয়, কারণ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা মূলত ক্রমাগত কাজ করে। কিছু রোগজীবাণু যেমন ভেরেসেলা-জস্টার ভাইরাস (যা চিকেন পক্স সৃষ্টি করে) যদিও সংক্রমণটি সর্বজনীন, তবুও এটি দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধক ক্ষমতাকে বহন করে। অন্যদিকে ক্লোস্ট্রিডিয়াম টিটেনির (যে জীবাণুতে টিটেনাস রোগ হয়) স্বাভাবিক সংক্রমণে কোনও সুরক্ষা দেয় না, তাই লোকেদের এটির জন্য টিকার যে বুস্টার শটগুলি রয়েছে সেগুলো নিয়মিত নেওয়া প্রয়োজন। এই বর্ণালীটির চূড়ান্ত প্রান্তে, এইচআইভিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায়ই প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবডি থাকে যা রোগ প্রতিরোধ বা দূর করতে পারে না।
নতুন করোনাভাইরাস বোঝার প্রাথমিক পর্যায়ে এটি অস্পষ্ট যে কোভিড -১৯ এর ইমিউনিটি কোন স্পেকট্রামে পড়ে। যদিও SARS-CoV-2 এ আক্রান্ত বেশিরভাগ লোকেরা অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে বলে মনে হয়, ডন বাউডিস (প্যাথলজি ও আনবিক মেডিসিনের অধ্যাপক এবং অন্টারিওর ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে বয়স এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বিষয়ে কানডা রিসার্চ চেয়ার) বলেন, "আমরা এখনো জানিনা এই সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকরীভাবে কি কাজ করবে"। গবেষকরা দুটি প্রশ্নের উত্তর দিতে এখনো দ্বিধান্বিত যে: SARS-CoV-2 এর অ্যান্টিবডিগুলি কতদিন ধরে মানুষের শরীরে থাকে? এবং তা পুনরায় সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে কতটুকু কাজ করে?
প্রথমদিকে, কিছু লোক - উল্লেখযোগ্যভাবে ইউ কে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন (যিনি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রয়েছেন) এবং তার সরকারের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা প্যাট্রিক ভ্যালেন্স-এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন যে মহামারীটি বন্ধ করার চূড়ান্ত উপায় হতে পারে ভালো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।এবং যদিও কোভিড-১৯ থেকে সু্স্থ হয়ে ওঠা রোগীদের শরীরে কমপক্ষে দুসপ্তাহ পর্যন্ত অ্যান্টিবডি পাওয়া গিয়েছে কিন্তু এই অ্যান্টিবডি দীর্ঘকালীন সময় পর্যন্ত থাকার কোন তথ্য পাওয়া যায় নি। তাই অনেক বিজ্ঞানীরা সমগোত্রীয় অন্যান্য করোনাভাইরাস থেকে এর উত্তর পাওয়ার চেষ্টা করছে।
মৌসুমি করোনাভাইরাস (যেগুলো সাধারণ ঠান্ডার জন্য দায়ী) এর বিরুদ্ধে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, উদাহরণস্বরূপ তা মূলত ইনফেকশন হওয়ার দুই সপ্তাহের পর কমতে শুরু করে। এবং একবছরের মধ্যে এর দ্বারা পুনরায় আক্রান্ত হয়। এধরনের পর্যবেক্ষণ খুবই বিরক্তর বিষয় হয়ে দাড়ায় যখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এটা প্রায় অসম্ভব ১৮ মাসের মধ্যে আমাদের হাতে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আসা। কিন্তু SARS-CoV, যেটা সার্স এর জন্য দায়ী, এর জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের সাথে SARS-CoV-2 এর অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায় যেটা আশাব্যঞ্জক। SARS-CoV এর অ্যান্টিবডি টেস্টে পাওয়া যায় যে চার মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন প্রয়োগকারীর দেহে রোগপ্রতিরোধ করতে সক্ষম হয় এবং এটা কদাচিৎ ২-৩ বছর পর্যন্ত প্রতিরক্ষা প্রদান করে থাকে। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক প্রীতি মিলানী জেএএমএ এর চীফ এডিটর হাওয়ার্ড বাউচার এর সাথে এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে বলেন যে, " বর্তমান সময়টা কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা নিয়ে চিন্তা করার এক উত্তম সময়"।
এমনকি অ্যান্টিবডির স্টীকগুলো যদি দেহে থেকেও থাকে তবে সেগুলো ভবিষ্যতের কোন ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে পারবে কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। বাউডিস বলেন, আমরা চাই 'নিউট্রালাইজিং এন্টিবডি' যা একধরনের প্রোটিন যেগুলো ভাইরাসের গ্রাহক কোষের সাথে যুক্ত এবং গ্রাহক কোষকে উন্মুক্ত করে এমন ইনফেকশন কে কমিয়ে দেগ বা প্রতিরোধ করে। এগুলো খুব সহজে সনাক্ত করা যায় এবং ভ্যাকসিন উন্নয়নকারীদের জন্য ইমিউন টি-সেল বিকশিত করার থেকেও অধিক সহজ। অপরদিকে নন-নিউট্রালাইজিং এন্টিবডি গুলো জীবাণু কে শনাক্ত করতে পারে কিন্তু এগুলো প্যাথোজেন গুলোর সাথে কার্যকরীভাবে যুক্ত হতে পারে না এবং কোষকে আক্রমণের হাত থেকে রক্ষাও করতে পরে না।
বাউডিশ বলেন যে," মানুষ যদি প্রাকৃতিকভাবে নিজেরদের শরীরে নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি তৈরি করে (SARS-CoV-2 এর বিরুদ্ধে ) তবে তখন আমাদের এটা খুঁজে বের করতে হবে যে এটি ভাইরাসটির কোন প্রোটিন অংশের সাথে যুক্ত হয় এবং আমাদের সেই ছোট্ট প্রোটিন অংশটিকে টার্গেট করতে হবে যেটা আমাদের জন্য এক জাদুকরী বুলেট হিসেবে কাজ করবে"। SARS-CoV-2 এর জন্য, সেই টার্গেট সাইটটি সম্ভবত তার স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিনের তথাকথিত রিসেপ্টর-বাইন্ডিং ডোমেনের উপর রয়েছে যা সুগারের সাথে যুক্ত একটি প্রোটিন যেটি ব্যবহার করে ভাইরাস কোষগুলিতে প্রবেশ করে। তবে, বাউডিশ বলেছেন, এই স্পটটি একটি চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করতে পারে কারণ সুগারের প্রলেপ যুক্ত পদার্থের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব একটা ভাল নয়।
তবুও, ল্যাবরেটরি ডিশে কোষগুলির কয়েকটি ছোট স্টাডি থেকে বোঝা যায় যে SARS-CoV-2 এর ইনফেকশন নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডির উৎপাদনকে তরান্বিত করে। এবং প্রানীদের নিয়ে একটি পরীক্ষা থেকে জানা যায় যে এধরনের অ্যান্টিবডিগুলো কমপক্ষে দুসপ্তাহ পর্যন্ত পুনঃসংক্রমণ থেকে রক্ষা করে থাকে। অধিকন্ত, কিছু করোনাভাইরাস এর স্পাইক প্রটিন, যেমন SARS-CoV ও MARS-CoV ( যে ভাইরাস মিডল ইস্ট রেসপিরেটরী সিন্ড্রোম এর জন্য দায়ী)-সহ, সনাক্ত ও প্রতিক্রিয়া করতে কিছু অ্যান্টিবডি ভালো কাজ করে,এ তথ্যগুলো গবেষকেরা বিগত মহামারীর অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারছেন।
SARS-CoV-2 এর রিয়াল-লাইফ ইমিউনিটি সম্পর্কিত গবেষণা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং এটা নিয়ে অনিশ্চয়তাও রয়ে গেছে। একটি গবেষণা ভাইরাল লোড এবং অ্যান্টিবডি উপস্থিতির মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই দাবী করেছে , গবেষকেরা মানব দেহ থেকে ভাইরাস দূর করার ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডিগুলির প্রকৃত ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এ ছাড়া, SARS-CoV-তে পিয়ার-রিভিউ করা গবেষণা এবং SARS-CoV-2 এর প্রিপ্রিন্ট স্টাডিতে রিপোর্ট করা হয়েছে যে কিছু নন-নিউট্রালাইজিং করোনাভাইরাস অ্যান্টিবডিগুলি সেই রোগজীবাণুগুলির সাথে পুনরায় সংক্রমণ করার সময় বা অন্য করোনা ভাইরাসগুলির সাথে ক্রস সংক্রমণের জন্য ক্ষতিকারক প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং, নতুন গবেষণার বেশিরভাগ ক্ষেত্র আশাব্যঞ্জক, বাউডিশ, যতক্ষণ না গবেষকরা কোভিড -১৯ রোগে বেঁচে থাকা মানুষের নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডিগুলির উৎপাদন অনুপাতের পরিমাণ না জেনে থাকেন, ততক্ষণ অ্যান্টিবডি টেস্টিং ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন।
স্বাভাবিক ভাবে SARS-CoV-2 ভাইরাসের প্রতি ইমিউনিটি এমন হবে, যেমনটা একটা বাচ্চা চিকেন পক্সের বিরুদ্ধে ইমিউনিটি অর্জন করে। প্রথম দিকের গবেষণা থেকে বোঝা যায় যে আমরা আরও জটিল পরিস্থিতির জন্য মধ্যে আছি তবে সেই সময় এবং বিশ্বব্যাপী অভূতপূর্ব সহযোগিতা হয়ত অনুভূত হতে পারে। অবশেষে অ্যান্টিবডি পরীক্ষাগুলি আমাদের জীবন এবং অর্থনীতিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার মূল চাবিকাঠি হতে পারে। আপাতত, তারা বিশেষজ্ঞ, কর্মকর্তা এবং নাগরিকদের মহামারীটির একটি পরিষ্কার চিত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
মূল আর্টিকেলের লিংকঃ
https://www.scientificamerican.com/article/what-immunity-to-covid-19-really-means/
0 Comments