লেখাটি লিখেছেন Kirsten Taylor-McCabe ও Alina Deshpande. তারা গত ১১ এপ্রিল Scientific American এ লেখাটি লেখেন। লেখাটি বাংলায় অনুবাদ করেন হাসিবুল হাসান সিয়াম
ছবি সংগ্রহঃ wikiwand.com, (১৪ এপ্রিল পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর বিস্তৃতি |
আমরা করোনাভাইরাসের প্রকোপ এর মাঝামাঝি সময় এ চলে এসেছি। বিজ্ঞানীরা এখনো COVID-19 ভাইরাসটি বুঝতে চেষ্টা করছেন এবং ভাইরাসের প্রভাব কমানোর চেষ্টা দিন-রাত চালিয়ে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষেরা প্রথমবারের মত করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি, সংক্রামক দিকগুলো দেখেছেন। আমাদের মধ্যে যারা এই ক্ষেত্রে কাজ করেন তারা বহু দিন থেকেই জানেন, রোগের প্রাদুর্ভাব 'হবে কিনা' র মতো বিষয় না, বরং 'কখন রোগের প্রাদুর্ভাব হবে' সেটার বিষয় এবং আমরা যত বেশি প্রস্তুত থাকতে পারবো আমাদের জন্য তত ভাল।
রোগের বিরুদ্ধে মোকাবেলার জন্য বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত গবেষণার প্রয়োজন যার জন্য দরকার বিনিয়োগ। তবেই সঠিকভাবে উদীয়মান রোগের বিস্তার, প্রতিকার এবং ভবিষ্যতে এর প্রাদুর্ভাব কমানো যাবে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জলবায়ু পরিবর্তন উল্লেখযোগ্যভাবে রোগের উত্থান এবং ছড়িয়ে পড়ার জন্য দায়ী। কিছু কর্মসূচি আছে যেমন - মশারি বিতরণ, জনগণকে স্থাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অবগত করা, হাসপাতাল, ক্লিনিক এ জনবল এবং প্রয়োজনীয় তহবিল প্রেরণ। এসব কর্মসূচি পরিচালনা করলে কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব এর সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং প্রণয়নে সময় পাওয়া যাবে।
অতীতে যত মহামারী এই পৃথিবীতে এসেছে, সেগুলোর তথ্য থেকে আমরা খুব দ্রুত COVID-19 এর রহস্য উদঘাটন করতে পারি। এই ক্ষেত্রে আমরা ২০০৩ সালের SARS epidemic এবং ২০১৫ সালের MERS epidemic এর তথ্য থেকে দেখতে পারি, কিভাবে অতীতে এ ধরনের রোগ প্রশমিত করার জন্যে বিভিন্ন কৌশল কাজ করেছে। কৌশলগুলো হতে পারে রোগ সম্পর্কে সাধারণমানুষের মধ্যে প্রচার, মাস্ক বিতরণ, ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা যা কিনা COVID-19 এর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করে দেখতে পারি।
এছাড়াও কিছু রিয়েলটাইম মডেল আছে, যেগুলো করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত তথ্য ব্যবহার করে এর বিস্তার এবং পূর্বাভাস প্রদানে সক্ষম। Los Alamos National Laboratory এই মডেল এর কার্যকারিতা এবং যথার্থতা বৃদ্ধির জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকা বিভিন্ন পোষ্ট, বেনামী, জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত তথ্য ব্যবহার করছে কিভাবে Flu এর মত রোগ ছড়িয়ে পড়ে তা বুঝবার জন্য। একটি নির্দিষ্ট এলাকার মানুষজন যখন Flu এর মত রোগের লক্ষণ ফেসবুক, টুইটারে পোষ্ট করছে, এইসব তথ্য ব্যবহার করে রোগ সম্পর্কিত তথ্যের জন্য দিনের পর দিন, পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা না করে খুব দ্রুত এবং সহজে এলাকা সনাক্ত করা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব।
এছাড়া তারা আরো কিছু পদ্ধতি উন্নত করছে যেগুলো সংক্রামক রোগ সনাক্ত এবং তা নিরাময়ের জন্য ব্যবহার হয় যা Biological Assays বা জীববৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নামে পরিচিত। রোগের বিবর্তনের ফলে Biological Assays এর যথার্থতার অবনতি হয় কারণ জীবাণুগুলোর জীববৈজ্ঞানিক গঠন পরিবর্তনশীল যার কারণে ভুল রোগ নির্ণয় এবং ভুল চিকিৎসা এর মত ঘটনা ঘটতে পারে।অতীতে এ প্রক্রিয়াটি অনেক শ্রমেসাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল ছিল, এখন বিশাল কম্পিউটিশনাল পাওয়ার, আরটিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ব্যবহার করে খুব দ্রুত সহজে, আরো নিখুঁতভাবে নতুন জীববৈজ্ঞানিক গঠন তৈরি করা যায় যা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় - রোগের ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক তৈরি যাতে ভবিষ্যতে রোগের প্রাদুর্ভাব আটকানো যায়। Los Alamos এর গবেষকগণ বিশাল পরিমাণ তথ্য এবং সুপারকম্পিউটার ব্যবহার করে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি, উন্নয়ন এর কাজ করছেন। প্রকৃতপক্ষে, এইচআইভির ভ্যাকসিন যা ভাইরাসটির বিভিন্ন স্ট্রেনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বাড়ানোর লক্ষ্যে "মোজাইক" প্রোটিনের একটি সেট ব্যবহার করে সেটা বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি পরীক্ষায় ব্যবহৃত হচ্ছে।
এ সমস্ত উদাহরণ আমাদের ডেটা সায়েন্স এবং মহামারী সংক্রান্ত সরঞ্জামবলি ক্ষমতার পরিচয় দেয় যা মহামরী ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে সাহায্য করে। তবে এসব একদিনে তৈরি হয়নি কিংবা আসে নি। সারা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন গবেষকদের বছরের পর বছরের গবেষণা আছে, এর জন্য আমরা বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা এসব গবেষণালব্ধ ফলাফল ব্যবহার করে COVID-19 মোকাবেলায় অনেক সুবিধা পাচ্ছি কিন্তু গবেষক বৃন্দ কোন প্রাদুর্ভাব শিরোনাম হচ্ছে কিনা তা নিয়ে সন্ধেহ পোষণ করেন।
দুর্ভাগ্যবশত, রোগের প্রাদুর্ভাব চলবেই, প্রতিনিয়ত নতুন রোগের সৃষ্টি হবেই।বআমাদের অবশ্যই বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত গবেষণায় মনযোগী হতে হবে যাতে রোগের প্রাদুর্ভাবের সময় খুব তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের বিভিন্ন তথ্য প্রদান করা যায় যাতে জনসংখ্যার নিরাপওা নিশ্চিত হয়।
0 Comments